টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সেরা খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্পমেয়াদে, আপনার প্রতিদিনের খাবার ও স্ন্যাকস সরাসরি রক্তের শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে। দীর্ঘমেয়াদে, আপনার খাদ্যাভ্যাস টাইপ ২ ডায়াবেটিস জনিত জটিলতার ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারে।
আপনার খাদ্যাভ্যাসে কী কী স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সেরা খাদ্যাভ্যাস
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন
আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের হন, তবে আপনার দেহের ওজন ৫-১০% কমালে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, ওজন কমালে হৃদরোগের ঝুঁকিও হ্রাস পেতে পারে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যতম সাধারণ জটিলতা।
কেন পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবেন?
- ওজন কমানোর মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।
- শরীরের ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করে ওজন হ্রাস করা সহজ হয়।
- খাবারের আকার নিয়ন্ত্রণ করলে খাবারের পুষ্টিগুণ বজায় রেখে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এড়ানো সম্ভব।
কীভাবে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবেন?
- প্লেট মেথড ব্যবহার করুন: আপনার প্লেটটি তিনটি ভাগে ভাগ করুন—
- অর্ধেক শাকসবজি (যেমন— ব্রোকলি, গাজর, লাউ)
- এক-চতুর্থাংশ প্রোটিন (যেমন— মুরগির মাংস, মাছ, ডাল)
- এক-চতুর্থাংশ শর্করা (যেমন— লাল চাল, ওটস)
- খাবারের আকার ছোট রাখুন:
- বড় প্লেটের পরিবর্তে ছোট প্লেটে খাবার পরিবেশন করুন।
- একবারে বেশি খাবার না খেয়ে বারবার অল্প পরিমাণে খান।
- ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার কমান:
- ভাজাপোড়া, তেলে ভাজা খাবার এবং বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
- কোল্ড ড্রিংকস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, চিপস ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
- খাবারের সময় নির্ধারণ করুন:
- দিনের তিনটি প্রধান খাবার (নাশতা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার) এবং মাঝেমধ্যে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস রাখুন।
- খাবারের মধ্যে দীর্ঘ বিরতি এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে বেশি ক্ষুধা লাগতে পারে এবং বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
- আস্তে আস্তে খান:
- খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান, এতে তাড়াতাড়ি পেট ভরে যায়।
- দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস থাকলে বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের সুফল
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- ওজন কমানো সহজ হবে।
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে।
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন, কারণ ব্যক্তির বর্তমান ওজন, খাবারের অভ্যাস এবং স্বাস্থ্যগত প্রয়োজন অনুযায়ী এই নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে।
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন করুন
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হয়। “পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবার” বলতে এমন খাবার বোঝায়, যা তার আকার বা ক্যালোরি মানের তুলনায় বেশি পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহ করে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা:
- ফলমূল ও শাকসবজি: আপেল, কলা, কমলা, পেঁপে, ব্রোকলি, গাজর, পালং শাক ইত্যাদি।
- ডাল ও শিমজাতীয় খাদ্য: মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা, বিভিন্ন ধরনের শিম।
- সম্পূর্ণ শস্য: লাল চাল, লাল আটা, ওটস, ব্রাউন রাইস।
- বাদাম ও বীজ: আমন্ড, কাজু, আখরোট, সূর্যমুখী বীজ, তিসির বীজ।
- চর্বিহীন প্রোটিন: মুরগির মাংস, হালকা গরুর মাংস, চর্বিহীন হাঁস-মুরগি।
- মাছ ও ডিম: সামুদ্রিক মাছ (যেমন— স্যালমন, সার্ডিন), দেশি মাছ (যেমন— রুই, কাতলা) এবং ডিম।
- দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: চিনি ছাড়া দই, কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং চিজ।
কখন কিছু খাবার সীমিত করতে হবে?
আপনার স্বাস্থ্যের চাহিদা অনুযায়ী কিছু খাবার সীমিত করা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, কিছু টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ডায়েট মেনে চলা উপকারী হতে পারে।
কোন কোন খাবার সীমিত করতে হবে?
- উচ্চ-কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ফল (যেমন— আম, কাঁঠাল, লিচু)
- স্টার্চযুক্ত শাকসবজি (যেমন— আলু, মিষ্টি আলু, কচু)
- শুষ্ক ডাল (যেমন— শুকনা ছোলা, শুকনা মটরশুঁটি)
- শস্যজাতীয় খাবার (যেমন— সাদা চাল, ময়দা)
কীভাবে কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করবেন?
যদি আপনাকে কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে নিম্নলিখিত খাবারগুলো বেছে নিতে পারেন:
- চর্বিহীন প্রোটিন: মুরগির মাংস, ডিম, মাছ।
- বাদাম ও বীজ: তিসির বীজ, সূর্যমুখী বীজ, আখরোট।
- শাকসবজি: পালং শাক, ব্রোকলি, ঢেঁড়স, ফুলকপি, কচু শাক ইত্যাদি।
️ প্রতিদিনের খাবারে পুষ্টিগুণ বজায় রাখুন
আপনার খাদ্যাভ্যাস যেমনই হোক না কেন, প্রতিটি খাবারের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার রাখা উচিত। ফলমূল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন, বাদাম ও সম্পূর্ণ শস্য খাবারের মাধ্যমে আপনার শরীর পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
আপনার নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য চাহিদার ভিত্তিতে, পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা সবচেয়ে ভালো উপায়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
পরিশোধিত (রিফাইন্ড) কার্বোহাইড্রেট স্বল্প পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হলেও এতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে। এই ধরনের খাবার বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও থাকে। তাই, টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ সীমিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
❌ পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারগুলোর তালিকা
- চিনি-যুক্ত খাবার ও পানীয়:
- মিষ্টি, চকোলেট, ক্যান্ডি
- কুকি, কেক, পেস্ট্রি
- সফট ড্রিংকস এবং সোডা
- পরিশোধিত শস্যজাত পণ্য:
- সাদা চাল (পলিশড রাইস)
- সাদা আটা (ময়দা) দিয়ে তৈরি রুটি, পরোটা, লুচি
- সাদা পাস্তা এবং নুডলস
- ফলজাতীয় পানীয়:
- প্যাকেটজাত ফলের রস (যেমন— টেট্রা প্যাক জুস)
- প্রক্রিয়াজাত ফলের পানীয় যেগুলোতে অতিরিক্ত চিনি মেশানো হয়
কেন পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এড়ানো উচিত?
- রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়: পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খুব দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয়, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
- ওজন বৃদ্ধি করে: এই খাবারগুলোর ক্যালোরি বেশি, কিন্তু পুষ্টিগুণ কম। অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ ওজন বাড়িয়ে দেয়।
- পুষ্টির অভাব: পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট থেকে ভিটামিন, খনিজ এবং আঁশ (ফাইবার) সরিয়ে ফেলা হয়, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
✅ পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে কী খাবেন?
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে নিচের খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় যোগ করুন—
- সম্পূর্ণ শস্য (Whole Grains):
- লাল চাল
- লাল আটা বা সম্পূর্ণ গমের আটা (হোল গ্রেইন ফ্লাওয়ার)
- ওটস এবং ব্রাউন রাইস
- ফলমূল এবং শাকসবজি:
- আসল ফল (যেমন— আপেল, কমলা, পেঁপে)
- তাজা শাকসবজি (যেমন— গাজর, পালং শাক, ব্রোকলি)
- প্রাকৃতিক আঁশসমৃদ্ধ খাবার:
- ডাল (যেমন— মসুর ডাল, মুগ ডাল)
- ছোলা এবং শিম
- বাদাম (যেমন— আমন্ড, আখরোট)
পরামর্শ
- কখনো কখনো খেতে পারেন: পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট (যেমন— মিষ্টি, কুকি) মাঝেমধ্যে খেতে পারেন, তবে নিয়মিত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলুন: যেসব খাবারের লেবেলে “রিফাইন্ড” বা “এনরিচড ফ্লাওয়ার” লেখা থাকে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
- চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবারের বিকল্প বেছে নিন: প্রাকৃতিক মিষ্টি, যেমন— খেজুর বা মধু মাঝেমধ্যে ব্যবহার করতে পারেন।
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, আঁশযুক্ত এবং সম্পূর্ণ শস্যজাত খাবার গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়।
❤️ হৃদয়-সুরক্ষাকারী চর্বিযুক্ত খাবার বেছে নিন
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন (ADA) অনুসারে, আপনি কতটা চর্বি খান তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোন ধরণের চর্বি আপনি গ্রহণ করছেন। টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে মনোআনস্যাচুরেটেড (Monounsaturated) এবং পলি-আনস্যাচুরেটেড (Polyunsaturated) চর্বি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
✅ স্বাস্থ্যকর চর্বির উৎস
মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারগুলো হৃদয়ের জন্য উপকারী। এই চর্বি ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে।
উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ চর্বিযুক্ত খাবারের তালিকা
- অ্যাভোকাডো
- বাদাম: আমন্ড, কাজু, আখরোট, চিনাবাদাম (পিনাট)
- বীজ: কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, তিলের বীজ
- চর্বিযুক্ত মাছ: স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকারেল, টুনা
- সয়াবিন পণ্য: টফু, সয়া মিল্ক
- তেল:
- জলপাই তেল (অলিভ অয়েল)
- ক্যানোলা তেল
- তুলার বীজের তেল (কটনসিড অয়েল)
- তিসির তেল (ফ্ল্যাক্সসিড অয়েল)
- চিনাবাদামের তেল (পিনাট অয়েল)
- স্যাফলার তেল
- সয়াবিন তেল
- সূর্যমুখীর তেল (সানফ্লাওয়ার অয়েল)
❌ যে চর্বি এড়িয়ে চলতে হবে
ADA-এর সুপারিশ অনুসারে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট এড়ানো উচিত। এই ধরনের চর্বি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
⚠️ স্যাচুরেটেড ফ্যাটের উৎস
- উচ্চ চর্বিযুক্ত মাংস:
- নিয়মিত গরুর কিমা (গ্রাউন্ড বিফ)
- সসেজ, বেকন, বলোনিয়া
- হট ডগ (প্রসেসড মাংস)
- উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য:
- ঘন দুধ (ক্রীম), সম্পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত দুধ (ফুল-ফ্যাট মিল্ক)
- পূর্ণ চর্বিযুক্ত চিজ (ফুল-ফ্যাট চিজ)
- পোলট্রি চামড়া:
- মুরগির চামড়া
- হাঁস বা টার্কির চামড়া
- চর্বিযুক্ত তেল:
- মাখন (বাটার)
- লার্ড (প্রাণীর চর্বি)
- নারকেল তেল (কোকোনাট অয়েল)
- পাম তেল এবং পাম কার্নেল তেল
⚠️ ট্রান্স ফ্যাটের উৎস
- প্রসেসড স্ন্যাকস: প্যাকেটজাত চিপস, বিস্কুট, প্রক্রিয়াজাত নাস্তা
- স্টিক মার্জারিন: সাধারণ মার্জারিন নয়, স্টিক মার্জারিনের চর্বি বেশি থাকে।
- শর্টেনিং: সাধারণত কেক, পেস্ট্রি, ফ্রোজেন পিৎজা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
পরামর্শ
- স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করুন: রান্নায় জলপাই তেল বা সয়াবিন তেল ব্যবহার করুন।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন: প্যাকেটজাত চিপস, কুকি এবং প্রসেসড মাংস এড়িয়ে চলুন।
- প্রাকৃতিক উৎস থেকে স্বাস্থ্যকর চর্বি পান: মাছ, বাদাম ও বীজ থেকে প্রাকৃতিক চর্বি পাওয়া সবচেয়ে ভালো।
- খাদ্য লেবেল পরীক্ষা করুন: প্যাকেটজাত খাবারে “Hydrogenated” বা “Partially Hydrogenated” লেখা থাকলে তা ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ, তাই এটি এড়িয়ে চলুন।
স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করলে শুধু হৃদরোগ নয়, টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হয়। তাই স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে, স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণে মনোযোগ দিন। ❤️
নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করুন
টাইপ ২ ডায়াবেটিস পরিচালনার জন্য একটি নির্দিষ্ট খাদ্য পরিকল্পনা সবার জন্য উপযুক্ত নয়। প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক চাহিদা, স্বাদ, খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি ব্যক্তিগত খাদ্য পরিকল্পনা প্রয়োজন।
️ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরণের ডায়েট অনুসরণ করা যেতে পারে। নিচে কিছু জনপ্রিয় খাদ্য পরিকল্পনা উল্লেখ করা হলো:
1️⃣ মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট
- উৎস: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল (ইতালি, গ্রিস)
- খাদ্য উপাদান:
- পুরো শস্য (Whole grains)
- শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম এবং বীজ
- স্বাস্থ্যকর তেল (বিশেষ করে জলপাই তেল)
- চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, সার্ডিন)
- উপকারিতা: এটি শুধুমাত্র ডায়াবেটিস নয়, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
2️⃣ DASH (Dietary Approaches to Stop Hypertension) ডায়েট
- উৎস: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
- খাদ্য উপাদান:
- শাকসবজি, ফলমূল, দুধ ও দুধজাত পণ্য (লো-ফ্যাট)
- লবণ কমাতে বলা হয়
- পরিমিত প্রোটিন (মাছ, মুরগি, বিনস, বাদাম)
- উপকারিতা: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায়ও কার্যকর।
3️⃣ লো-কার্বোহাইড্রেট ডায়েট
- উৎস: কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ সীমিত করা হয়।
- খাদ্য উপাদান:
- কম কার্বোহাইড্রেট (স্টার্চি খাবার, রুটি, ভাত, আলু)
- বেশি প্রোটিন (মাছ, মুরগি, ডিম, বাদাম)
- প্রচুর শাকসবজি (যা কম কার্বযুক্ত)
- উপকারিতা: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
✅ কেন নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেয়া জরুরি?
একটি উপযুক্ত খাদ্য পরিকল্পনা তৈরির জন্য একজন ডায়েটিশিয়ানের সাহায্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, প্রতিটি ব্যক্তির চাহিদা, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস, রান্নার পদ্ধতি এবং বাজেট আলাদা।
একজন নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান কীভাবে সাহায্য করতে পারেন:
- ✅ ব্যক্তিগত খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি: আপনার ওজন, ব্লাড সুগার, খাদ্যাভ্যাস ও বাজেট অনুযায়ী পরিকল্পনা করবেন।
- ✅ পুষ্টি ঘাটতি পূরণে সহায়ক: আপনার শরীরে কোন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি আছে তা চিহ্নিত করবেন।
- ✅ ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: ওজন কমাতে বা বাড়াতে সঠিক দিকনির্দেশনা দেবেন।
- ✅ খাবারের সঠিক সময়: কখন খাবেন, কী খাবেন, এবং কোন খাবার এড়াবেন তা শেখাবেন।
পরামর্শ
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- আপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকর ডায়েট প্ল্যান পেতে একজন নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।
- ডায়েট প্ল্যানটি এমনভাবে তৈরি হবে যাতে স্বাদ, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগত চাহিদা পূরণ হয়।
নিজের শরীরকে ভালোবাসুন এবং ডায়েটিশিয়ানের নির্দেশনা মেনে সুস্থ জীবনযাপন করুন। ❤️
মূল কথা
টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওজন কমানো এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এড়াতে—
- পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন।
- পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন।
- পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট কমান।
- স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করুন এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি এড়িয়ে চলুন।
আপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকর খাদ্যাভ্যাস নির্ধারণ করতে এবং ব্যক্তিগতকৃত খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করা ভালো। সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনাকে সুস্থ জীবনযাপন করতে সহায়তা করবে।
আপনার স্বাস্থ্য, আপনার নিয়ন্ত্রণ!