ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুষম খাদ্য খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাবার, ফল, সবজি, গোটা শস্য, ডাল, এবং দুগ্ধ সহ বিভিন্ন ধরণের খাদ্য খাওয়া জরুরি। অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার, উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এমনভাবে খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে যেনো রক্তের গ্লুকোজ স্তর নিয়ন্ত্রিত থাকে, এবং শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করা আবশ্যক।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সেরা খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস রোগীদের সবুজ শাকসবজি, তাজা ফলমূল, দানাদার শস্য খাদ্য এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার অধিক গ্রহণ করতে হবে এগুলোতে ফাইবার বেশি থাকে—যেমন বাদামি চাল, গোটা শস্য, মটরশুটি বা ফল—আপনার প্লেটের এক-চতুর্থাংশ হওয়া উচিত। প্রোটিন জাতীয় খাবার – যেমন চর্বিহীন মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার আপনার প্লেটের এক চতুর্থাংশ হওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ৯টি অন্যতম সবজি
১. গাজর
গাজরে ভিটামিন এ বেশি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সুস্থ চোখ রাখতে সাহায্য করে।
২. ব্রকলি
কার্বোহাইড্রেট কম হওয়ায় এটি হজমকে ধীর করে দেয়, এর অর্থ হল ব্রোকলি খাওয়া আপনার রক্তে শর্করার মাত্রার উপর খুব কম প্রভাব ফেলবে।
৩. বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বেশি থাকে, যা হৃদরোগকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং রক্তে শর্করার বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করতে পারে।
৪. পালং শাক
সব শাক-সবুজ শাকসবজির মতো, পালং শাক পুষ্টিকর-ঘন এবং ক্যালোরিতে খুব কম। এটি আয়রনেও সমৃদ্ধ, যা সুস্থ রক্ত প্রবাহের চাবিকাঠি। পালং শাকে থাইলাকয়েড নামক ঝিল্লিও রয়েছে, যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতায় সাহায্য করতে পারে।
৫. টমেটো
টমেটো যৌগ যা হৃদরোগের কম ঝুঁকি এবং নির্দিষ্ট ক্যান্সারের পাশাপাশি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সহ অনেক স্বাস্থ্য সুবিধার সাথে যুক্ত।
৬. শসা
শসা হল একটি উচ্চ-জলের সবজি যা আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করতে পারে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং সারা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৭. লেটুস
বিভিন্ন ধরণের লেটুসে বিভিন্ন পুষ্টি থাকে তবে সবকটিতেই ফাইবার এবং পানি বেশি থাকে। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধা এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লেটুস রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে আরও অবদান রাখে।
৮. মাশরুম
যদিও মাশরুমগুলি জাদুকরী সুপারফুড নয় যা কখনও কখনও এটি তৈরি করা হয়। মাশরুমে বি ভিটামিন বেশি থাকে।
৯. সবুজ মটরশুটি
সবুজ মটরশুঁটিতে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ থাকে এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। প্রচুর পরিমাণে শুকনো মটরশুটি আপনি খেতে পারেন এটি স্বাস্থ্যকর খাবারগুলির মধ্যে অন্যতম।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ৮ টি সেরা ফল
১. বেরি
ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি এবং ব্ল্যাকবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ এবং এর গ্লাইসেমিক সূচক কম।
২. আপেল
দ্রবণীয় ফাইবারে ভরপুর, আপেল রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং একটি সন্তোষজনক ক্রাঞ্চ প্রদান করতে পারে।
৩. নাশপাতি
তাদের ফাইবার সামগ্রী এবং ধীর-হজমকারী শর্করা সহ, নাশপাতি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থির রাখতে অবদান রাখে।
৪. সাইট্রাস ফল
কমলালেবু, জাম্বুরা, লেবু এবং চুন ভিটামিন সি এবং দ্রবণীয় ফাইবার সরবরাহ করে, যা ভাল গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণের প্রচার করে।
৫. চেরি
চেরিগুলিতে এমন যৌগ রয়েছে যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
৬. বরই
বরই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস, যা রক্তে শর্করার ভালো ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখে।
৭. আঙ্গুর
রক্তে শর্করার বৃদ্ধি না ঘটিয়ে তাদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার উপভোগ করার জন্য আঙ্গুরের ছোট অংশ বেছে নিন।
৮. তরমুজ
প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকা সত্ত্বেও, তরমুজের গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে এবং এটি পরিমিতভাবে উপভোগ করা যায়।
ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা
সকালবেলার নাস্তা
- খালি পেটে এক গ্লাস পানি
- চিড়া: ১ কাপ (দুধ/পানি দিয়ে রান্না করা)
- ডিমের সাদা অংশ: ২টি
- সবজি: ব্রকলি, ক্যারট, শসা, বেলপেপার (১০০ গ্রাম)
দুপুরের খাবার
- লাল চাল বা ব্রাউন রাইস: ১ কাপ
- মুরগির মাংস বা মাছ: ১০০ গ্রাম (গ্রিল/বেকড)
- ডাল: ১/২ কাপ
- সবজি: ১ কাপ (নানারকম সবজি মিশিয়ে রান্না করা)
- সালাদ: ১ কাপ (শসা, টমেটো, লেটুস, লেবুর রস দিয়ে)
- দই: ১/২ কাপ (কম ফ্যাটযুক্ত)
বিকেলের খাবার
- বাদাম: ১০-১৫টি (বাদাম, আখরোট, কাজু)
- ফল: ১টি (আপেল/পেয়ারা/কমলা)
সন্ধ্যার খাবার
- ছোলা বা মসুর ডাল: ১/২ কাপ
- গ্রিল করা সবজি: ১ কাপ
রাতের খাবার
- লাল চাল বা ব্রাউন রাইস: ১/২ কাপ বা রুটি (আটা/মাল্টিগ্রেইন): ২টি
- মাছ বা মুরগির মাংস: ১০০ গ্রাম (গ্রিল/বেকড)
- সবজি: ১ কাপ
- সালাদ: ১ কাপ (শসা, টমেটো, লেটুস, লেবুর রস দিয়ে)
- দই: ১/২ কাপ (কম ফ্যাটযুক্ত)
অন্যান্য টিপস:
- প্রচুর পানি পান করুন।
- চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
- উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সম্পন্ন খাবার এড়িয়ে চলুন।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
মনে রাখবেন:
প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ভিন্ন, তাই এই খাদ্য তালিকা তৈরি করার আগে একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করুন। খাদ্য তালিকাটি প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যেতে পারে।