দৌড়, সাইকেল চালানো এবং HIIT ওয়ার্কআউট সহ কিছু ব্যায়াম অন্যদের তুলনায় প্রতি ঘন্টায় বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে পারে৷
দৌড়ানো প্রতি ঘন্টায় সবচেয়ে বেশি ক্যালোরি বার্ন হয়। কিন্তু আপনি যদি দৌড়ানোর ইচ্ছা না হয়, তাহলে অন্যান্য ক্যালোরি-বার্নিং ব্যায়াম আছে সেগুলো করতে পারেন, যেমন HIIT ওয়ার্কআউট, দড়ি লাফানো এবং সাঁতার কাটা৷ আপনি আপনার পছন্দের এবং ফিটনেস স্তর অনুযায়ী এই ব্যায়াম করতে পারেন।
আপনি কত ক্যালোরি বার্ন করেন তা বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করেঃ
- ব্যায়ামের সময়কাল
- গতি
- তীব্রতা
- আপনার ওজন এবং উচ্চতা
সাধারণত, আপনার ওজন যত বেশি হবে, শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সময় আপনি তত বেশি ক্যালোরি বার্ন করবেন।
ক্যালোরি বার্ন করার জন্য সেরা ব্যায়াম
নিম্নলিখিত সারণীতে শীর্ষ 12টি ক্যালোরি-বার্নিং ব্যায়াম রয়েছে। এই ব্যায়ামগুলি প্রতি ঘন্টায় সর্বাধিক ক্যালোরি পোড়ায়। মনে রাখবেন, তালিকাভুক্ত ক্যালোরি একটি অনুমান। আপনার সঠিক ক্যালোরি পোড়ানো তীব্রতা, সময়কাল এবং আপনার ওজনের মতো বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে।
ব্যায়াম/শরীরের ওজন | ১২৫পাউন্ড | ১৫৫ পাউন্ড | ১৮৫ পাউন্ড |
দৌড়ানো | ৬৫২ | ৮০৮ | ৯৬৫ |
ওয়াটার পোলো | ৫৬৬ | ৭০৩ | ৮৩৯ |
সাইকেল চালানো | ৪৮০ | ৫৯৬ | ৭১০ |
ক্যালিসথেনিক্স | ৪৮০ | ৫৯৬ | ৭১০ |
সার্কিট প্রশিক্ষণ | ৪৮০ | ৫৯৬ | ৭১০ |
দড়ি লাফ | ৪৫৩ | ৫৬২ | ৬৭১ |
স্থির সাইকেল চালানো | ৪২০ | ৫২০ | ৬২২ |
রোয়িং মেশিন | ৪২০ | ৫২০ | ৬২২ |
বায়বীয় নৃত্য | ৩৯৬ | ৪৯২ | ৫৮৭ |
সাঁতার (নৈমিত্তিক) | ৩৯৬ | ৪৯২ | ৫৮৭ |
জগিং | ৩৯৬ | ৪৯২ | ৫৮৭ |
হাইকিং | ৩৪০ | ৪২১ | ৫০৩ |
বিঃ দ্রঃ এক পাউন্ড প্রায় ৪৫৩.৫৯ গ্রামের সমান।
সময়ের সংকটে
আপনি এমন ব্যায়াম করতে পারেন যা প্রচুর ক্যালোরি বার্ন করতে পারে, এমনকি আপনার কাছে কম সময় থাকলেও। মূল বিষয় হল উচ্চ-তীব্রতার ওয়ার্কআউটগুলিতে ফোকাস করা যা আপনার হৃদস্পন্দনকে দ্রুত বাড়িয়ে দিবে।
উচ্চ-তীব্রতার ব্যবধান প্রশিক্ষণ বা HIIT এটি করার একটি জনপ্রিয় উপায়। উচ্চ-তীব্রতার ওয়ার্কআউট করে, আপনি 30 মিনিট বা তার কম সময়ে প্রচুর ক্যালোরি বার্ন করতে পারেন।
আপনি যখন সময় সংকটে থাকেন তখন প্রচুর ক্যালোরি বার্নের জন্য এই অনুশীলনগুলি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
হাই-নির রানিং
৩০ মিনিটে ক্যালোরি বার্ন করে:
২৪০ থেকে ৩৫৫.৫
উচ্চ-হাঁটু দৌড় একটি শক্তিশালী কার্ডিও ওয়ার্কআউট। এটি আপনার হৃদস্পন্দন বাড়ায় এবং আপনার নিম্ন শরীরকে শক্তিশালী করে।একটি উচ্চ-তীব্রতার ব্যায়াম হিসেবে, উচ্চ-হাঁটু দৌড় স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্যালোরি বার্ন করার জন্য কার্যকর।
হাই-নির রানিং ওয়ার্কআউট করার পদ্ধতি:
- আপনার হাঁটু যতটা সম্ভব উঁচুতে তোলার সময় জায়গায় দৌড়ান।
- দ্রুত আপনার হাত উপরে এবং নীচে পাম্প করুন।
উপকারিতা:
- দ্রুত দৌড়ানোর ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
- শরীরের উচ্চ তীব্রতার কাজের ফলে বেশি ক্যালোরি বার্ন হয়।
- স্বল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ তীব্রতার কাজের ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যায়।
সতর্কতা:
- হাঁটু তুলতে গিয়ে খুব বেশি ঝুঁকে পড়বেন না।
- হাতের মুভমেন্ট যেন পায়ের সাথে সামঞ্জস্য থাকে।
- শরীর সোজা রাখুন এবং তাড়াহুড়ো করবেন না।
হাই-নির রানিং শুরুর আগে হালকা স্ট্রেচিং করে নিন এবং শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী এই ব্যায়াম করুন। নিয়মিত অনুশীলনে আপনার কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক ফিটনেস উন্নত হবে।
বাট-কিক
৩০ মিনিটে ক্যালোরি বার্ন করে:
২৪০ খেকে ৩৫৫.৫
নিতম্বে লাথি (Butt Kicks) ওয়ার্কআউট একটি সাধারণ কার্ডিও ব্যায়াম যা পায়ের পিছনের পেশি এবং কুঁচকির পেশিকে টার্গেট করে। এটি করার মাধ্যমে পায়ের গতি বৃদ্ধি করা যায় এবং পায়ের পেশি শক্তিশালী করা যায়। নিচে নিতম্বে লাথি ওয়ার্কআউটের স্টেপ-বাই-স্টেপ নির্দেশিকা দেওয়া হল:
বাট কিক ওয়ার্কআউট করার পদ্ধতি:
- একটি পা উঁচু করে পেছনে নিন যাতে নিতম্বে লাথি মারার মতো মনে হয়।
- পা মাটিতে নামিয়ে অন্য পা দিয়ে একই কাজ করুন।
- দ্রুত পায়ের গতিবিধি বাড়ান, যেন পায়ের গোড়ালি নিতম্ব স্পর্শ করার চেষ্টা করে।
- এই পদ্ধতিতে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত চালিয়ে যান।
- সোজা হয়ে থাকুন, শরীর সামনে ঝুকাবেন না।
- কাঁধকে রিলাক্স রাখুন।
- পা মাটি থেকে দ্রুত তুলুন এবং নামান।
উপকারিতা:
- কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত করে।
- পায়ের পেশির গতি ও শক্তি বৃদ্ধি করে।
- ওয়ার্ম আপ হিসেবে ভালো কাজ করে।
- ক্যালোরি বার্নে সহায়ক।
পরামর্শ:
- যদি ব্যাথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন, তবে ব্যায়াম বন্ধ করুন।
- ধীরে ধীরে গতি বাড়ান, প্রথম থেকেই দ্রুত করার চেষ্টা করবেন না।
- পা মাটিতে ফেলার সময় সাবধান থাকুন, যেন আঘাত না লাগে।
নিতম্বে লাথি ওয়ার্কআউট আপনার ফিটনেস রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করে, আপনি সহজেই আপনার কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস এবং পায়ের পেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে পারেন।
মাউন্টেন ক্লাইম্বার্স
৩০ মিনিটে ক্যালোরি বার্ন করে:
২৪০ খেকে ৩৫৫.৫
মাউন্টেন ক্লাইম্বার্স ওয়ার্কআউট একটি চমৎকার কার্ডিও এবং পুরো শরীরের ব্যায়াম যা পেটের পেশি, পায়ের পেশি এবং কাঁধকে শক্তিশালী করতে সহায়ক। এটি আপনার হৃদপিণ্ডের গতি বাড়ায় এবং ক্যালোরি বার্ন করতে সহায়ক। নিচে মাউন্টেন ক্লাইম্বার্স ওয়ার্কআউটের স্টেপ-বাই-স্টেপ নির্দেশিকা দেওয়া হল:
মাউন্টেন ক্লাইম্বার্স ওয়ার্কআউট করার পদ্ধতি:
- আপনার ডান হাঁটু বুকের দিকে টেনে আনুন যতদূর সম্ভব।
- দ্রুত ডান পা পিছনে নিয়ে যান এবং একইভাবে বাম হাঁটু বুকের দিকে টেনে আনুন।
- এইভাবে পায়ের পজিশন পরিবর্তন করুন যেন দৌড়ানোর মতো মনে হয়।
- দ্রুত গতি বজায় রাখুন এবং ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যান।
উপকারিতা:
- কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত করে।
- পেটের পেশি, পায়ের পেশি এবং কাঁধের পেশি শক্তিশালী করে।
- সহনশীলতা বৃদ্ধি করে।
- দ্রুত ক্যালোরি বার্নে সহায়ক।
পরামর্শ:
- শুরুতে ধীরে ধীরে শুরু করুন, পরে গতি বাড়ান।
- ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করলে ব্যায়াম বন্ধ করুন।
- সঠিক ফর্ম বজায় রাখার চেষ্টা করুন, যেন আঘাত না লাগে।
মাউন্টেন ক্লাইম্বার্স ওয়ার্কআউট আপনার ফিটনেস রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করে, আপনি সহজেই আপনার কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস, পেটের পেশি এবং শরীরের অন্যান্য প্রধান পেশিগুলিকে শক্তিশালী করতে পারেন।
স্টেশনারি বাইসাইক্লিং
৩০ মিনিটে ক্যালোরি বার্ন করে:
২১০ থেকে ৩১১
স্টেশনারি বাইসাইক্লিং একটি জনপ্রিয় ইনডোর কার্ডিও ব্যায়াম যা শরীরের মাংসপেশি শক্তিশালী করতে এবং ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। এই ব্যায়ামটি একটি স্থির বাইসাইকেল ব্যবহার করে করা হয় যা বাইরের সাইক্লিংয়ের অনুভূতি দেয়, তবে জায়গায় থাকেন।
সতর্কতা:
- সিট এবং হ্যান্ডলবার ঠিকমতো সামঞ্জস্য না হলে ব্যথা হতে পারে, তাই সঠিকভাবে সেট করুন।
- হাই ইন্টেন্সিটি ওয়ার্কআউটের আগে হালকা ওয়ার্ম-আপ এবং পরে কুল ডাউন করতে ভুলবেন না।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং ডিহাইড্রেশন এড়াতে যথেষ্ট বিশ্রাম নিন।
স্টেশনারি বাইসাইক্লিং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য, সহনশীলতা এবং পেশিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি একটি সহজ এবং কার্যকর ব্যায়াম যা ঘরে বসেই করা যায়।
স্প্রিন্টস
৩০ মিনিটে ক্যালোরি বার্ন করে:
২৪০ থেকে ৩৫৫.৫
স্প্রিন্টস একটি উচ্চ-তীব্রতা ব্যায়াম যা স্বল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ গতিতে দৌড়ানোর মাধ্যমে করা হয়। এই ব্যায়ামটি মূলত গতি, শক্তি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। স্প্রিন্টস কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ক্যালরি পোড়াতে সহায়ক।
স্প্রিন্ট ওয়ার্কআউট করার পদ্ধতি:
- প্রথমে হালকা জগিং বা ওয়ার্ম-আপ করে শরীর গরম করুন। পেশি এবং জয়েন্টগুলো প্রস্তুত করতে স্ট্রেচিং করুন।
- স্প্রিন্ট শুরু করার জন্য প্রস্তুত হন। এক পা সামনের দিকে এবং অন্য পা পেছনে রেখে দৌড়ানোর মতো অবস্থান নিন। হাত দুটোও দৌড়ানোর অবস্থায় রাখুন।
- সামনের পা দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করে শুরু করুন এবং দ্রুত পা পরিবর্তন করুন। হাতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দৌড়ানোর চেষ্টা করুন।
- স্বল্প সময়ের জন্য সর্বোচ্চ গতি বজায় রাখুন। সাধারণত ২০-৩০ সেকেন্ড স্প্রিন্ট করা হয়।
- স্প্রিন্ট শেষ করার পর ধীরে ধীরে হাঁটুন বা হালকা জগিং করুন। ১-২ মিনিট বিশ্রাম নিন যাতে হৃদপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক হয়।
- একাধিকবার স্প্রিন্ট করুন। শুরুতে ৪-৫ বার এবং ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়িয়ে ৮-১০ বার করুন।
সতর্কতা:
- ওয়ার্ম-আপ এবং কুল ডাউন করতে ভুলবেন না।
- খুব বেশি চাপ দেবেন না এবং আপনার ক্ষমতা অনুযায়ী স্প্রিন্ট করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং ডিহাইড্রেশন এড়াতে মনোযোগ দিন।
- হাঁটু, গোড়ালি বা পিঠে ব্যথা হলে স্প্রিন্ট বন্ধ করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্প্রিন্টস নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে গতি, শক্তি এবং সামগ্রিক শারীরিক ফিটনেস উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি একটি কার্যকর ব্যায়াম যা স্বল্প সময়ে উচ্চ পরিমাণ ক্যালরি পোড়াতে সহায়ক।
সারসংক্ষেপ
প্রতি ঘন্টায় সবচেয়ে বেশি ক্যালোরি পোড়ানোর জন্য দৌড়ানো সেরা। তবে স্থির সাইকেল চালানো, জগিং এবং সাঁতার কাটাও চমৎকার বিকল্প।
এছাড়াও, HIIT (High-Intensity Interval Training) ব্যায়াম ক্যালোরি পোড়ানোর জন্যও খুবই কার্যকর। একটি HIIT ওয়ার্কআউটের পরে, আপনার শরীর ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত ক্যালোরি পোড়াতে থাকবে।
আপনি যদি একটি নতুন ব্যায়াম রুটিন শুরু করতে চান, প্রথমে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়াও, স্বতন্ত্র নির্দেশনার জন্য একজন ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক বা শারীরিক থেরাপিস্টের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। এই বিশেষজ্ঞরা আপনাকে নিরাপদে এবং কার্যকরভাবে ব্যায়াম করতে সাহায্য করতে পারবেন।