প্রেগন্যান্সি টেস্ট
প্রেগন্যান্সি টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা আপনাকে নিশ্চিত করে গর্ভধারণের বিষয়টি। সঠিক সময়ে টেস্ট করা এবং এর ফলাফল বোঝা সহজ হলে আপনিও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এই লেখায় সহজ ভাষায় প্রেগন্যান্সি টেস্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময়
- ঘরে বসে প্রেগন্যান্সি টেস্টের সহজ পদ্ধতি
- প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়ম
- প্রেগন্যান্সি টেস্টের সঠিকতা এবং ফলাফল
- কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর
প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময়
মাসিকের তারিখ মিস হলে এবং আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (যেমন: কনডম, পিল, বা ইনজেকশন) ব্যবহার করা ছাড়া সহবাস করে থাকলে, প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। সাধারণত মাসিক মিস হওয়ার প্রথম দিনেই টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। প্রেগন্যান্সি টেস্ট সাধারণত গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন’ (hCG) হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। তবে, প্রেগন্যান্সি শুরুর দিকে এই হরমোনের উপস্থিতির পরিমাণ খুব কম থাকে, তাই প্রেগন্যান্সি শুরুর দিকে টেস্টে করলে সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। মাসিক মিস হওয়ার প্রথম দিন অথবা সহবাসের ২১ দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। সকালে প্রথম প্রস্রাবে টেস্ট করা ভালো। এই সময় hCG হরমোনের ঘনত্ব বেশি থাকে। বর্তমানে আধুনিক কিছু টেস্ট কিট দিয়ে মাসিকের শুরুর ৯ দিন আগেও টেস্ট করে ফলাফল জানা সম্ভব, তবে তা সাধারণ কিটের চেয়ে ব্যয়বহুল।
পড়ুন: মেয়েরা সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয়
কীভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন?
প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে ঘরে বসে খুব অল্প খরচে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট বা কাঠি ব্যবহার করে আপনি টেস্ট করতে পারবেন। নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে ৩০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিনে টেস্ট করতে পারেন। যদি কিটের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকে বা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে চান, তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, বা আল্ট্রাসাউন্ড করাতে পারেন। ডাক্তারের মাধ্যমে করা পরীক্ষাগুলো আরও নির্ভুল এবং গর্ভধারণের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়ম
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ এবং সুবিধাজনক। তবে প্রস্তুতকারকভেদে কিছু নিয়ম ভিন্ন হতে পারে। কিটের প্যাকেটের ভেতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ করলে আপনি সহজেই সঠিক ফলাফল পেতে পারেন। বাজারে সাধারণত যেসব প্রেগন্যান্সি কিট পাওয়া যায় তার ভিতরে লম্বা একটি কিট পাওয়া যায়। কিটের ‘S’ লেখা ঘরে কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব দিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। কিটের বক্সে ‘C’ ও ‘T’ চিহ্নিত আলাদা আলাদা ঘর রয়েছে। শুধু ‘C’ চিহ্নিত ঘরে লাল দাগ দেখা যায় তাহলে ফলাফল নেগেটিভ, আর্থাৎ হয়তো আপনি গর্ভবতী না।
আর ‘C’ ও ‘T’ উভয় ঘরে লাল দাগ দেখা দিলে ফলাফল পজিটিভ, আর্থাৎ আপনি গর্ভবতী। প্রয়োজনে ফলাফল নিশ্চিত করতে একাধিকবার টেস্ট করুন।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কীভাবে কাজ করে?
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট প্রস্রাবে ‘বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন’ (hCG) নামের একটি বিশেষ হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করে। এই হরমোন গর্ভধারণের চয় থেকে সাত দিন পর তৈরি হয় এবং প্রস্রাবে মাধ্যমে নিঃসৃত হয়। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটে শনাক্ত করার মতো হরমোনের পরিমান উপস্থিত তাকলে ফলাফল পর্জেটিভ আসে। আর শনাক্ত করার মতো হরমোনের পরিমান উপস্থিত না থাকলে ফলাফল নের্গেটিভ আসে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটে ফলাফল পর্জেটিভে আসলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্তে সঠিক হয়।
সকালে প্রথম প্রস্রাবে টেস্ট করা ভালো, কারণ এই সময় hCG-এর ঘনত্ব বেশি থাকে। প্রথম টেস্টে ফলাফল অস্পষ্ট হলে কয়েকদিন পর আবার টেস্ট করুন।
টেস্টের সঠিকতা ও ফলাফল
সঠিক নিয়মে টেস্ট করলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট প্রায় সবসময় নির্ভুল ফলাফল দেয়। তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:
- গর্ভধারণের শুরুর দিকে hCG-এর মাত্রা কম থাকলে ফলাফল নেগেটিভ হতে পারে। কারণ গর্ভবধারণের ৬-৭ দিন পর থেকেই শরিরীরে hCG হরমোন তৈরি হতে শুরু করে। কারু কারু ক্ষেত্রে ১০-১২ দিন সময়ও লাগতে পারে।
- অনিয়মিত মাসিক থাকলে মাসিকের সময় সঠিক ভাবে নির্ধারণ করতে না পারলে গর্ভবতী হবার পরেও ফলাফল নের্গেটিভ আসতে পারে। এক্ষেত্রে অনেকে সঠিক সময় আসার আগেই টেস্ট করে থাকে।
- প্যাকেটের নির্দেশিকা ঠিকমতো না মানলে ভুল ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
ফলাফল পড়ার নিয়ম:
- পজিটিভ ফলাফল: hCG পাওয়া গেছে, আপনি গর্ভবতী।
- নেগেটিভ ফলাফল: hCG পাওয়া যায়নি।
পড়ুন: গর্ভধারণের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময়
জেনে রাখা জরুরি
ফলাফল পজিটিভ হলে বা সন্দেহ থাকলে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো করা যেতে পারে:
- আল্ট্রাসাউন্ড
- রক্ত পরীক্ষা
- ডপলার আল্ট্রাসাউন্ডে শিশুর হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপ শনাক্ত
ফলাফল পজিটিভ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং গর্ভাবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
সহবাসের কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত?
সহবাসের অন্তত ২১ দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করুন। এই সময়ে শরীরে hCG হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা সহজ হয়।
লবণ বা টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কি সঠিক?
এখন পর্যন্ত লবণ বা টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায় তা কোনো গবেষণায় প্রমাণিত হয় নি। সুতরাং, এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করা সবচেয়ে সহজ ও নির্ভুল।
প্রেগন্যান্সি টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ হলে করব?
ফলাফল নেগেটিভ আসলে কয়েকদিন পর আবার টেস্ট করুন। এরপরও সন্দেহ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
প্রেগন্যান্সি টেস্ট সাশ্রয়ী এবং সহজ একটি পদ্ধতি। সঠিক সময়ে টেস্ট করলে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিলে আপনি আপনার ও গর্ভের সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে পারবেন।