পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ৭টি ঘরোয়া উপায়

মাসিক চক্রের বা পিরিয়ডের শুরুতে পেটে ব্যথা অনুভব করা কমন বিষয়। কিছু ক্ষেত্রে, ঘরোয়া প্রতিকার মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় রয়েছে।

মাসিকের সময়, জরায়ু সংকুচিত হয় যাতে জরায়ুর প্রাচীর থেকে আস্তরণটি দূরে সরিয়ে শরীর থেকে যোনির মাধ্যমে বের হতে পারে। এই সংকোচনগুলি পিরিয়ডের ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে। 

মাসিকের সময়, বেশিরভাগ মানুষ তাদের নিম্ন পেটে ব্যথা অনুভব করেন, যদিও ব্যথা নীচের পিঠ, কুঁচকি বা ঊরুর উপরের অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে। পিরিয়ডের ব্যথা সাধারণত মাসিকের শুরুতে বেশি তীব্র হয় এবং দিন গড়ানোর সাথে সাথে তা কমতে থাকে। নিছে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ৭টি ঘরোয়া উপায় আলোচনা করা হলো।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

১. গরম পানির সেঁক নিন

গরম পানির সেঁক নিন। () গবেষণায় দেখো গেছে যে, পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় প্রচলিত ঔষুধের চেয়ে গরম পানির সেঁক বেশি কিংবা সমান কার্যকর। গরম পানির সেঁক  আইবুপ্রোফেনের সমান এবং  প্যারাসিটামলের থেকে বেশি কার্যকর। গরম সেঁকের আরেকটি বড় সুাবিধা হলো এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

পেটে একটি গরম পানির বোতল বা গরম প্যাড রাখলে পেশীগুলি শিথিল হয় এবং ব্যথা উপশম হয়। তাপ জরায়ুর পেশী এবং এর আশেপাশের পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে, যা ব্যথা এবং অস্বস্তি কমায়।

যেভাবে সেঁক দিবেন: একটি ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ তোয়ালে অথবা মোটা গামছা দিয়ে মুড়িয়ে পেটের ওপর রাখতে পারেন। হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। যেমন—

  • সহনীয় তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে
  • মুখ ভালোভাবে আটকানো আছে কি না দেখে নিতে হবে
  • একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যাগ উল্টেপাল্টে দিতে হবে

‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ এর পরিবর্তে ‘ইলেকট্রিক হিটিং প্যাড’ সহ অন্যান্য উপায়ে সেঁক নেওয়া যেতে পারে।

পড়ুন

অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণ

২. হালকা ব্যায়াম করুন

গবেষণায় দেখো গেছে যে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকাংশে কমতে পারে()সপ্তাহে তিনবার পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার পর্যন্ত নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করতে হবে। পিরিয়ডের সময় শরীরে ব্যথা থাকার কারণে ব্যায়াম নাও করতে ইচ্ছে হতে পারে, এর জন্য ভারী ব্যায়াম বাধে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন সাঁতার কাটা, হাঁটা, সাইকেল চালানো ও ইয়োগার মতো হালকা ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন।

২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সপ্তাহে দুইবার এক ঘণ্টার ইয়োগার ব্যায়াম ১২ সপ্তাহ ধরে করলে মাসিকের ব্যথা ও উপসর্গের তীব্রতা কমে যায়।()

আরও পড়ুন

পিরিয়ড ও গর্ভাবস্থার লক্ষণের পার্থক্য

৩. তলপেট ম্যাসাজ করুন

তলপেটের ওপর ম্যাসাজ করলে পেলভিক পেশি শিথিল করতে এবং ব্যথা প্রশমিত করতে সহায়ক হয়।

আপনি পেট ম্যাসাজের জন্য তেল, বডি লোশন, বা নারকেল তেল মৃদুভাবে ঘষতে পারেন যাতে ম্যাসাজ করতে সুাবিধা হয়।

তবে, অত্যাবশ্যক তেলের সাথে তলপেট ম্যাসাজ করা পিরিয়ডের ব্যথার জন্য একটি অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে।

৪. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন 

খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন করলে মাসিকের ব্যথা কমতে পারে।

নিম্নলিখিত উপাদানসমূহে সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্য খাওয়া শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে:

শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে তরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সহায়ক হতে পারে। ডিহাইড্রেশন পেশীর ক্র্যাম্পের একটি সাধারণ কারণ।

৫. কুসুম গরম পানিতে গোসল 

কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে পেট, পিঠ এবং পায়ের পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। এটি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, এবং আপনাকে রিল্যাক্স করতেও সাহায্য করবে।

৬. চা পান করুন

আদা চা, পুদিনা চা বা ক্যামোমিল চা মাসিকের ক্র্যাম্প উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।

৭.ওষুধ ব্যবহার করুন

প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার যদি পিরিয়ডের ব্যথা উপশম করতে না পারে, তবে একজন ব্যক্তি ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক যেমন অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করতে পারেন।

এই ওষুধগুলি প্রদাহ, ব্যথা এবং মাসিকের ক্র্যাম্প উপশম করতে পারে। বোতলের উপর দেওয়া ডোজ নির্দেশাবলী অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ এবং যদি সুপারিশকৃত ডোজ মাসিকের ক্র্যাম্প উপশম করতে যথেষ্ট না হয় তবে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া দরকার।

পিরিয়ডের ব্যথা হওয়ার কারণ

পিরিয়ডের ব্যথা (ডিসমেনোরিয়া) হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রধান কারণগুলো হলো:

  • জরায়ুর সংকোচন: মাসিকের সময়, জরায়ু সংকুচিত হয় যাতে জরায়ুর আস্তরণ বেরিয়ে যেতে পারে। এই সংকোচনগুলি ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন: মাসিকের সময় জরায়ু প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক রাসায়নিক নিঃসরণ করে, যা জরায়ুর পেশীগুলিকে সংকুচিত করে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • এনডোমেট্রিওসিস: এটি একটি অবস্থা যেখানে জরায়ুর আস্তরণ জরায়ুর বাইরের দিকে বৃদ্ধি পায়, যা তীব্র ব্যথা এবং ক্র্যাম্পের কারণ হতে পারে।
  • ফাইব্রয়েডস: জরায়ুর অন্দর দেয়ালে ছোট ছোট টিউমার বা গাঁট দেখা দেয়, যা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • এডেনোমায়োসিস: এতে জরায়ুর আস্তরণ জরায়ুর পেশীগুলির মধ্যে প্রবেশ করে, যা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ (PID): এটি একটি সংক্রমণ যা প্রজনন অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • সার্ভিক্যাল স্টেনোসিস: জরায়ুর মুখ খুব সরু হয়ে যায়, যা রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।

এই কারণগুলির মধ্যে যে কোনো একটির জন্য পিরিয়ডের সময় ব্যথা হতে পারে। যদি ব্যথা খুব বেশি হয় এবং নিয়মিত কাজকর্ম ব্যাহত করে, তবে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

মাসিকের সময় কী খাবার এড়ানো উচিত?

মাসিকের সময় কিছু খাবার এড়ানো উচিত যা ব্যথা ও অস্বস্তি বাড়াতে পারে। এই ধরনের খাবারগুলো হলো:

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: যেমন ফাস্ট ফুড, চিপস, এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার, যা উচ্চমাত্রার লবণ এবং সংরক্ষণাগার থাকে।
  • ক্যাফেইন: যেমন কফি, চা, এবং চকোলেট, যা শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং ক্র্যাম্পের তীব্রতা বাড়াতে পারে।
  • চিনি: অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা প্রদাহ এবং অস্বস্তি বাড়াতে পারে।
  • অ্যালকোহল: এটি শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং প্রদাহের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা মাসিকের সময় ব্যথা বাড়াতে পারে।
  • মসলাযুক্ত খাবার: খুব বেশি মসলাযুক্ত খাবার পেটের সমস্যা এবং অস্বস্তি বাড়াতে পারে।
  • তৈলাক্ত এবং ভাজা খাবার: এ ধরনের খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং মাসিকের সময় পেটের অস্বস্তি বাড়াতে পারে।

এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা মাসিকের সময় ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সংক্ষিপ্তসার

মাসিকের আগে এবং সময়ে পিরিয়ডের ক্র্যাম্প একটি সাধারণ উপসর্গ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ক্র্যাম্প স্বাভাবিক, তবে কিছু পরিস্থিতি আরও গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।

যদি ঘরোয়া প্রতিকারগুলি মাসিকের ক্র্যাম্প উপশম করতে সফল না হয়, তবে ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *